ছাত্রদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ নিয়ম

বাংলাদেশে শিক্ষাঋণ প্রদানকারী ব্যাংক সমূহভাবছেন, ছাত্রজীবন থেকেই কীভাবে নিজের ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় শুরু করবেন? চিন্তা করার কিছুই নেই! এখনকার ডিজিটাল যুগে মাত্র কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি খুলে ফেলতে পারেন নিজের স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট।
ছাত্রদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ নিয়ম
ছাত্রজীবনের ছোট ছোট সঞ্চয়ই একদিন আপনার বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নের মূলধন হতে পারে। তাই এখনই উদ্যোগ নিন, খুলে ফেলুন নিজের স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট, এবং শুরু করুন আপনার অর্থনৈতিক স্বাধীনতার যাত্রা।






ছাত্রদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ নিয়ম

ছাত্রজীবন হলো ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়ে তোলার সময়। এ সময়ে শুধু পড়াশোনা নয়, আর্থিক শৃঙ্খলাও তৈরি হওয়া জরুরি। অনেকে ভাবে, টাকা সঞ্চয় তো চাকরি বা ব্যবসা শুরু করার পর করা যাবে”, কিন্তু সত্যি বলতে সঞ্চয় শুরু করার সেরা সময় হলো ছাত্রজীবন থেকেই। অল্প অল্প করে হলেও যদি আপনি নিয়মিত টাকা জমা রাখতে পারেন, 
তাহলে তা এক সময়ে বড় সহায়ক হয়ে দাঁড়াবে। পড়াশোনার খরচ, বই কেনা, টিউশন ফি বা ছোটখাটো জরুরি প্রয়োজনে সেই টাকাই কাজে আসবে। এজন্য ব্যাংকগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। এই অ্যাকাউন্ট খোলা খুব একটা জটিল নয়,কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র ও সহজ ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি নিজের নামে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন। আজকের এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানব,
  • সেভিংস অ্যাকাউন্ট আসলে কী
  • কেন ছাত্রদের জন্য এটি জরুরি
  • ধাপে ধাপে কীভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়
  • কোন কাগজপত্র ও স্বাক্ষর দরকার
  • এবং এর মাধ্যমে ছাত্ররা কী কী বিশেষ সুবিধা পাবে

সেভিংস অ্যাকাউন্ট কী?

সেভিংস অ্যাকাউন্ট হলো এক ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যেখানে আপনি নিরাপদে টাকা জমা রাখতে পারেন এবং চাইলে সময়মতো তা ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাংক আপনার জমাকৃত টাকার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদও প্রদান করে। অন্য কথায়, এটি হলো আপনার ছোট্ট ভান্ডার, যেখানে আপনি খরচের বাইরে বাড়তি টাকা জমা রাখবেন। 
যখন প্রয়োজন হবে, তখন আপনি ATM কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং বা ব্যাংকের কাউন্টার থেকে সেই টাকা তুলতে পারবেন। ছাত্রদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্টের একটি বিশেষ সুবিধা হলো, এতে সাধারণত ন্যূনতম ব্যালেন্স খুব কম লাগে এবং বিভিন্ন সার্ভিস চার্জও কম হয়। ফলে ছাত্ররা খুব অল্প টাকাতেই তাদের সঞ্চয় শুরু করতে পারে।

ছাত্ররা কেন সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলবে?

অনেক ছাত্রই ভাবে, আমি তো এখনও উপার্জন করি না, আমার আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কী দরকার? কিন্তু বাস্তবতা হলো, ছাত্রজীবনে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা মানেই ভবিষ্যতের দিকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।

নিচে এর কয়েকটি বড় কারণ দেওয়া হলোঃ


১. নিরাপদে টাকা জমা রাখা
ছাত্ররা প্রায়শই বৃত্তি, উপবৃত্তি বা পরিবারের কাছ থেকে পড়াশোনার খরচ হিসেবে টাকা পায়। হাতে নগদ টাকা রাখলে তা সহজে খরচ হয়ে যেতে পারে কিংবা হারিয়ে যেতে পারে। সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখলে সেই টাকা নিরাপদ থাকে।

২. খরচ নিয়ন্ত্রণ ও হিসাব রাখা
ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই দেখা যায় কোন তারিখে কত টাকা খরচ হয়েছে বা জমা হয়েছে। এতে খরচের হিসাব রাখা সহজ হয়।

৩. অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা
বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা দেয়। ছাত্ররা সহজেই মোবাইল থেকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারে, বিল দিতে পারে, এমনকি অনলাইন শপিংয়ের টাকা পরিশোধ করতে পারে।

৪. বৃত্তি বা বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণ
অনেক সময় ছাত্ররা বিদেশি বৃত্তি পায় বা আত্মীয়রা বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলে সেই টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে জমা হয়—কোনো ঝামেলা ছাড়াই।

৫. সুদ পাওয়ার সুযোগ
ছাত্ররা যত টাকা জমা রাখবে, তার উপর নির্দিষ্ট সময় পর সুদ পাবে। যদিও অঙ্কটি ছোট মনে হতে পারে, তবে এটি ছাত্রজীবনেই “অর্থ বাড়ার অভ্যাস” সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ধাপে ধাপে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম

১. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন
অ্যাকাউন্ট খোলার আগে আপনাকে কিছু কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এগুলো ছাড়া কোনো ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্ট চালু করবে না।

সাধারণত যা যা লাগে,
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি হয়।
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ: ১৮ বছরের নিচে হলে এটি ব্যবহার করতে হবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড / ভর্তি সনদ: ছাত্র হিসেবে প্রমাণ করার জন্য।
  • অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি: অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে প্রয়োজন হবে।
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি: সাধারণত ২–৪ কপি লাগে।
  • প্রাথমিক জমার রসিদ: ব্যাংকের নির্ধারিত ন্যূনতম টাকা জমা দিতে হবে।

বিদ্র: ব্যাংকে যাওয়ার আগে সব কাগজপত্র আলাদা ফোল্ডারে সাজিয়ে রাখলে প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হবে।

২. ব্যাংক নির্বাচন করুন
সব ব্যাংকের নিয়ম এক নয়। তাই আগে ভালোভাবে খোঁজ নিন কোন ব্যাংক আপনার জন্য উপযুক্ত।
  • ছাত্রদের জন্য কোন কোন সুবিধা দেখে ব্যাংক নির্বাচন করবেন?
  • কম বা শূন্য ব্যালেন্সে অ্যাকাউন্ট খোলা যায় কি না।
  • বিনামূল্যে ATM/ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে কি না।
  • অনলাইন/মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা আছে কি না।
  • সার্ভিস চার্জ কতটা কম।
  • আপনার এলাকার কাছে শাখা বা ATM বুথ আছে কি না।

 উদাহরণস্বরূপ: অনেক ব্যাংক মাত্র ১০০ বা ২০০ টাকা দিয়েই ছাত্রদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়। আবার কিছু বড় ব্যাংকে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রাথমিক আমানত লাগে।


৩. ব্যাংক ভিজিট বা অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট
বর্তমানে অনেক ব্যাংক অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ দেয়। তবে চাইলে সরাসরি শাখায় গিয়েও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।

যা করবেন,
  • ব্যাংকে গিয়ে রিসেপশনে বলুন আপনি "স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট" খুলতে চান।
  • আপনার কাগজপত্র জমা দিন।
  • ব্যাংক আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট ফর্ম দেবে।
বিশেষ পরামর্শ: ব্যাংকের ব্যস্ত সময় (যেমন অফিস শুরু বা শেষ হওয়ার সময়) এড়িয়ে গেলে আপনার কাজ দ্রুত হবে।

৪. ফর্ম পূরণ ও চুক্তি স্বাক্ষর
ব্যাংকের দেওয়া ফর্মটি ভালোভাবে পূরণ করতে হবে।

যা যা লিখতে হবে,


  • আপনার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম
  • অভিভাবকের নাম ও তথ্য (১৮ বছরের নিচে হলে)
  • পেশা হিসেবে "ছাত্র" লিখবেন
  • আপনার স্বাক্ষর (এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, ভবিষ্যতের লেনদেনে এই স্বাক্ষরই যাচাই করা হবে)
  • এরপর ব্যাংকের অফিসার আপনাকে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বলবে।

৫. প্রাথমিক আমানত জমা দিন
প্রতিটি ব্যাংকই কিছু ন্যূনতম টাকা জমা দেওয়ার শর্ত রাখে।
  • অনেক ব্যাংক ছাত্রদের জন্য ১০০ বা ২০০ টাকা নিলেই অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়।
  • বড় ব্যাংকগুলো সাধারণত ৫০০–১,০০০ টাকা প্রাথমিক আমানত চায়।
  • কিছু ডিজিটাল ব্যাংক শূন্য ব্যালেন্সেই অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়।
  • টাকা জমা দেওয়ার পর আপনি একটি রসিদ পাবেন, যা প্রমাণ করবে আপনার অ্যাকাউন্ট চালু হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৬. ATM/ডেবিট কার্ড ও অনলাইন ব্যাংকিং সক্রিয় করুন
অ্যাকাউন্ট খোলার পর সাধারণত ৭–১০ দিনের মধ্যে ব্যাংক আপনাকে একটি ডেবিট/এটিএম কার্ড দেবে। এছাড়াও, চাইলে সাথে সাথেই মোবাইল ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং সক্রিয় করতে পারবেন।

এর সুবিধা হলো,
  • যেকোনো সময় টাকা তোলা বা জমা
  • মোবাইল থেকে ব্যালেন্স চেক
  • অনলাইনে বিল পরিশোধ বা কেনাকাটা

৭. সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন
অ্যাকাউন্ট খোলা মানেই কাজ শেষ নয়। এর আসল উপকার তখনই পাবেন, যখন নিয়মিত টাকা জমা রাখবেন।

যা করতে পারেন,
  • মাসিক খরচ থেকে অল্প কিছু টাকা আলাদা করে জমা দিন।
  • বড় খরচের আগে দু’বার ভাবুন।
  • ব্যাংকের নোটিফিকেশন বা স্টেটমেন্ট নিয়মিত চেক করুন।
 মনে রাখবেন: ছোট ছোট সঞ্চয়ই একদিন বড় মূলধনে পরিণত হয়।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ন্যূনতম আমানতের নিয়ম

ন্যূনতম আমানত কী?
ন্যূনতম আমানত হলো সেই প্রাথমিক টাকা, যা অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এটি ব্যাংকের একটি শর্ত, যাতে গ্রাহক পুরোপুরি খালি হাতে অ্যাকাউন্ট না খোলে। অর্থাৎ, এই টাকাটি হলো আপনার প্রথম সঞ্চয়ের পদক্ষেপ। ব্যাংক এই টাকার বিপরীতে আপনার অ্যাকাউন্ট চালু করে এবং ভবিষ্যতে লেনদেনের ভিত্তি তৈরি হয়। 
ন্যূনতম আমানত কী?


বাংলাদেশে ন্যূনতম আমানতের পরিমাণ সব ব্যাংকের নিয়ম এক নয়। তবে সাধারণত দেখা যায়,
  • সরকারি ব্যাংকগুলোতে: ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা জমা দিলেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
  • বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে: সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা লাগে।
  • ডিজিটাল বা অনলাইন ব্যাংকিং সেবায়: অনেক সময় শূন্য ব্যালেন্সেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
  • ছাত্রদের জন্য বিশেষ সুবিধা: অনেক ব্যাংক মাত্র ১০০ বা ২০০ টাকা দিয়েই স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট চালু করে দেয়।
কেন ন্যূনতম আমানত রাখা হয়?
১. ব্যাংক যেন প্রাথমিক খরচ সামলাতে পারে।
২. গ্রাহক যেন গুরুত্ব সহকারে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার শুরু করে।
৩. অ্যাকাউন্ট চালুর একটি নির্দিষ্ট প্রমাণ তৈরি হয়।


মনে করুন আপনি যদি মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন, সেই টাকা ব্যাংকে জমা থাকবে। এরপর চাইলে আপনি মাসিক ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা কিংবা যেকোনো পরিমাণ টাকা জমা করতে পারবেন।

ছাত্রদের জন্য বিশেষ সুবিধা
ব্যাংকগুলো জানে যে ছাত্ররা বড় আয় করে না, তাই তারা সহজ শর্তে ও ন্যূনতম খরচে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট চালু করে। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তুলে ধরা হলোঃ


  • কম টাকায় সঞ্চয় শুরু অর্থাৎ অন্য সাধারণ অ্যাকাউন্টের তুলনায় ছাত্রদের জন্য মাত্র ১০০ বা ২০০ টাকা দিয়েই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
  •  বৃত্তি বা উপবৃত্তির টাকা জমা রাখা অর্থাৎ অনেক ছাত্র বৃত্তি বা উপবৃত্তি পায়। সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলে সেই টাকা নিরাপদে জমা রাখা যায়।
  •  সুদ পাওয়ার সুবিধা অর্থাৎ ছাত্ররা তাদের জমা টাকার উপর ব্যাংকের নির্ধারিত হারে সুদ পায়। এতে সঞ্চয় টাকায় সামান্য হলেও বৃদ্ধি হয়।
  •  মোবাইল ও অনলাইন ব্যাংকিং অর্থাৎ স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা সক্রিয় করে দেয়। ফলে ছাত্ররা যেকোনো সময় টাকা ট্রান্সফার বা বিল পরিশোধ করতে পারে।
  • কম বা শূন্য সার্ভিস চার্জ অর্থাৎ বেশিরভাগ ব্যাংক ছাত্রদের জন্য সার্ভিস চার্জ খুব কম রাখে। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ ফি পুরোপুরি ফ্রি থাকে।
  • আন্তর্জাতিক সুবিধা অর্থাৎ যদি বিদেশ থেকে কোনো আত্মীয় টাকা পাঠায় বা আপনি স্কলারশিপ পান, সেই টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর ও কাগজপত্র

 স্বাক্ষরের গুরুত্ব
  • অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার স্বাক্ষর।
  • এই স্বাক্ষরটি ভবিষ্যতে ব্যাংকের সব লেনদেনের জন্য আপনার পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
  • যে কাগজে স্বাক্ষর করবেন, সেটিই হবে ব্যাংকের নথিভুক্ত স্বাক্ষর (Specimen Signature)।
  • ভবিষ্যতে চেক লিখতে, টাকা উত্তোলন করতে বা অন্য কোনো কাজ করতে গেলে ব্যাংক আপনার স্বাক্ষরটি মিলিয়ে নেবে।
বিদ্র: তাই, অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যেভাবে স্বাক্ষর করবেন, ভবিষ্যতেও ঠিক সেভাবে স্বাক্ষর করা খুবই জরুরি।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ছাত্রদের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে সাধারণত নিচের কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হয়,
  • অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম (Account Opening Form)
  • ব্যাংক থেকে দেওয়া নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে।
  • এতে নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, পিতামাতা/অভিভাবকের নামসহ মৌলিক তথ্য লিখতে হয়।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ
  • ১৮ বছরের বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার।
  • ১৮ বছরের নিচে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র (Student ID Card)
  • ছাত্র হওয়ার প্রমাণ হিসেবে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড কপি জমা দিতে হয়।
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাধারণত ২ কপি ছবি প্রয়োজন হয়।
  • কখনো কখনো অভিভাবকের ছবিও চাওয়া হতে পারে।
  • অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • ১৮ বছরের নিচে হলে অভিভাবকের সম্মতিতে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এজন্য তাদের NID কপি জমা দিতে হয়।
  • টাকা জমার রসিদ (Deposit Slip)
  • ন্যূনতম প্রয়োজনীয় টাকা জমা দিয়ে যে রসিদ পাবেন, সেটিও জমা দিতে হবে।

 কিছু ব্যাংকের অতিরিক্ত শর্ত
অনেক ব্যাংক ছাত্রদের কাছ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র (Bonafide Certificate) চাইতে পারে।
কোনো কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় গার্ডিয়ান অপারেশন (Parent/Guardian Operated Account) সুবিধা দেয়, যেখানে ছাত্রের সাথে অভিভাবকের নামও সংযুক্ত থাকে।

লেখকের শেষ কথা

ছাত্রজীবন শুধু পড়াশোনার সময় নয়, এটি ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ারও সময়। এই পর্যায়ে অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা শেখা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে রাখলে তা শুধু টাকা জমানোর জায়গা নয়, বরং দায়িত্ববোধ, সঞ্চয় অভ্যাস এবং আর্থিক শৃঙ্খলা শেখার প্রথম পদক্ষেপ। ছোট ছোট টাকার সঞ্চয়ও একসময় বড় আকার নিতে পারে, যদি সেটি নিয়মিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়।

আজকের ছাত্রই আগামী দিনের সফল নাগরিক। তাই এখন থেকেই অর্থ ব্যবহারে সচেতনতা এবং সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। সঠিক তথ্য জেনে ও নিরাপদ ব্যাংক বেছে নিয়ে যদি আপনি নিজের নামে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলেন, তবে সেটি আপনার শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবনেরও গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে। মনে রাখবেন, সঞ্চয় কেবল টাকা জমানো নয়, এটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়ার সূচনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url