ঈদুল আজহা ২০২৫ কত তারিখে - কোরবানির ঈদ কত তারিখে ২০২৫
জিলকদ মাসের রোজা - জিলকদ মাসের ১৫ টি ফজিলত ও আমলআসসালামু আলাইকুম আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো কোরবানির ঈদ কত তারিখে
২০২৫ বা ঈদুল আজহা ২০২৫ কত তারিখে পালন করা হবে।
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কোরবানির ঈদ কত
তারিখে ২০২৫ পালন করা হবে। আপনাদের সুবিধার জন্য ঈদুল আযহা ২০২৫ কোন মাসে?
উদযাপিত হবে সঠিক তথ্য জানতে হলে, আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য।
কোরবানির ঈদ কত তারিখে ২০২৫
পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ সমগ্র মুসলিম সম্পদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবটি প্রতি বছর হিজরি বর্ষ পুঞ্জিকা অনুসারে জিলহজ মাসের ১০
তারিখে পালন করা হয়ে থাকে। তবে চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল ও এর তারিখ বছর ভেদে
পরিবর্তিত হতে পারে। ২০২৫ সালের বাংলাদেশে কোরবানি ঈদ কবে উদযাপন করা হবে তা
নিয়ে অনেকে জানতে চায়।
তাই আজকের এই আর্টিকেলটি আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে,
কোরবানির ঈদ কত তারিখে ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
তাহলে চলুন বিস্তারিত অংশ নিয়ে আলোচনা করি। বিশেষ করে সৌদি আরবে চাঁদ দেখার
কমিটি ঘোষণা করেছে এবং অন্যান্য তথ্য ও সূত্র অনুযায়ী ২০২৫ সালে সৌদি আরবে
কোরবানি ঈদ,
অর্থাৎ ঈদুল আযহা পালিত হবে ৫ জুন। অর্থাৎ সে তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের সাধারণত
সৌদি আরবের পরের দিন ৬ জুন পালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চাঁদ দেখার উপর
নির্ভরশীল হওয়ায় ঈদুল আযহার তারিখ একদিন এদিক-ওদিক হোক হতে পারে। যদি ২৭ মে
২০২৫ তারিখে বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যায় তাহলে ঈদুল আযহা উদযাপন করা হবে ৬ জুন। আর
২৮ মে তারিখে যদি বাংলাদেশের চাঁদ দেখা যায় তাহলে ঈদুল আযহা উদযাপন করা হবে ৭
জুন তারিখে।
ঈদুল আযহা ২০২৫ কোন মাসে?
ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বেশ আনন্দের উৎসবের একটি দিন।
কারণ বছরে দুইটি বড় উৎসবের মধ্যে একটি হল ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদুল আযহা
উৎসবকে মুসলমান সম্প্রদায় ঈদুল ফিতরের মতোই আনন্দ এবং উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে
দিয়ে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের আত্মীয়-স্বজন সহকারে পালন করে।
তাই ২০২৫ সালে বাংলাদেশসহ অন্যান্য সকল মুসলিম দেশগুলো ঈদুল আযহা উৎসবটি চাঁদ
দেখার উপর নির্ভর করে পালিত হয়ে থাকে। ২০২৫ সালে জিলহজ মাসের চাঁদ যদি ২৭ মে
অর্থাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা যায় তাহলে, জিলহজ মাস শুরু হবে ২৮ মে থেকে এবং
ঈদুল আযহা পালিত হবে ৬ জুন শুক্রবার। কিন্তু যদি ২৭ মে ২০২৫ তারিখে চাঁদ যদি দেখা
না যায়,
তাহলে ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ পালিত হবে ৭ জুন শনিবার অথবা কোন বিশেষ
পরিস্থিতিতে ৮ জুন রবিবার ঈদুল আযহা পালিত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের সরকার
ঈদুল আযহা অর্থাৎ কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ দিনের ছুটি
ঘোষণা করেছে। যা সরকারি কর্মচারীরা তাদের পরিবার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে
কোরবানি উৎসবে সময় কাটাতে পারবে।
ঈদুল আযহার তাৎপর্য
ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। অর্থাৎ
এই উৎসবের পিছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র ইসমাইল
(আ.) করুন কাহিনীর তথ্যচিত্র। ইসলামিক ইতিহাস অনুযায়ী, আল্লাহ তায়ালা প্রতি
হযরত ইব্রাহিম (আ.) কতটুকু আনুগত্য ও ত্যাগ করতে পারে তা পরীক্ষা করার জন্য
নিজের পুত্র ইসমাইলকে
আরো পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির আমল - রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আল্লাহতালা আনুগত্য
স্বীকার করে এবং তার নির্দেশে তার পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার জন্য পিছপা হয়নি।
যখনই ইব্রাহিম(আ.) তার পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত তখন আল্লাহ তা'আলা
তার ত্যাগের মনোভাব বুঝতে পারে এবং তাকে বাধা দিয়ে তার পরিবর্তে একটি পশু
কোরবানি করার নির্দেশ দেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের ত্যাগ আনুগত্য এবং আল্লাহর প্রতি ভক্তি শিক্ষা
অনুপ্রেরণা দেয়। ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি হল
ত্যাগ। অর্থাৎ সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের মুসলমানগন এই দিনে ফজরের নামাজ আদায়ের
পর ঈদগাহে বা মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য
অনুযায়ী
গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ কিংবা উট কোরবানি দিয়ে থাকেন। কুরবানির মাংস তারা তিন
ভাগে ভাগ করে, এক ভাগ পরিবার অর্থাৎ নিজেদের জন্য, আরেকভাগ আত্মীয়-স্বজনদের
জন্য, এবং আর এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের জন্য এতে করে তাদের মধ্যে সমাজে সাম্যতা
ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়।
ঈদুল আযহার প্রধান আমল
ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ নামে পরিচিত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
ধর্মীয় উৎসব। এই দিনে হযরত ইব্রাহিম ত্যাগ ও আনুগত্য স্মরণে মুসলিমরা আল্লাহর
সন্তুষ্টি জন্য কোরবানি এবং বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি পালন
করে। নিচে ঈদুল আযহার প্রধান আমল সম্পর্কে তুলে ধরা হলো, যা প্রতিটি পাঠক এবং
মুসলিম সম্প্রদায়ের মুমিনদের জন্য উপকারী হবে।
ঈদের নামাজ আদায়
ঈদুল আদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল ঈদের দিনে বিশেষ নামাজ। অর্থাৎ এই নামাজটি
জামাতের সাথে মসজিদ বা ঈদগাহে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমান মুমিনদের জন্য সুন্নত।
তবে এই নামাজ আদায় করার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয় বা কিভাবে আদায় করবেন
তার সম্পর্কে নিম্নরূপে দেওয়া হল।
- নামাজ আদায় করার পূর্বে গোসল করুন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করুন।
- ঈদের নামাজ দুই রাকাত যাতে প্রথম রাকাতে ৭টি এবং দ্বিতীয় রাকাতে ৫ টি তাকবীর আদায় করুন।
- ঈদের নামাজের সময় খুতবা শোনা প্রতিটি মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব তাই নামাজের পর মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনুন।
কোরবানি
কোরবানি হলো ঈদুল আযহার মূল প্রতিপাদ্যের আমল। যা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র
হযরত ইসমাইল (আ.) এর ত্যাগের স্মরণের জন্য আদায় করা হয়। অর্থাৎ এই আমলটি কিভাবে
আদায় করতে হয় এবং কি কি নিয়ম ও দিক নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে
নিম্নরূপে দেওয়া হলো।
- ঈদুল আযহার বা কোরবানির পশু হতে হবে শরীয়ত নির্দেশিত মোতাবেক অনুসারে অর্থাৎ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি।
- কোরবানি প্রতিটি পশুর নির্দিষ্ট বয়স এবং স্বাস্থ্য শরীয়ত অনুসারে হতে হবে।
- কোরবানি ঈদের নামাজের পর থেকে জিলহজ্ব মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত করা যায়।
- কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম নিয়ম অর্থাৎ এক ভাগ নিজেদের জন্য এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য, আর একভাগ গরীব দুঃখীদের জন্য।
তাকবিরে তাশরিক পাঠ
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ পর থেকে ১৩ তারিখ আসর নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক
মুসলমানদের ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ পাঠ করা ওয়াজিব নিম্নলিখিত অংশে
তাকবিরে তাশরিক দেওয়া হল।
তাকবিরে তাশরিক:
اللّٰهُ أَكْبَرُ اللّٰهُ أَكْبَرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ
أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ
দান-সদকা ও গরিবদের সাহায্য
ঈদুল আযহা বা কোরবানি উৎসব হল ত্যাগের উৎসব। অর্থাৎ এই সময়ে গরীব দুঃখীদের মাঝে
কোরবানি গোশত বিতরণ করা এবং তাদের আর্থিক সাহায্য করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। তাই এই
দিনে দান সদকা ও গরিবদের কিভাবে সাহায্য করবেন এ বিষয়ে সম্পর্কে নিম্নরূপে
ব্যাখ্যা করা হলো।
- কোরবানির মাংস গরীব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করুন।
- দান এবং সদকা দিয়ে গরীব-দুঃখীদের ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।
- সমাজে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায়
ঈদুল আযহার দিনে প্রতিটি মুসলিমদের জন্য উচিত আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের শুকরিয়া
আদায় করা উচিত। অর্থাৎ নফল নামাজ থেকে শুরু করে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির এবং
দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায়
করা হয়।
লেখকের শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা কোরবানির ঈদ কত তারিখে ২০২৫ উদযাপন করা হবে এই বিষয়
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। অর্থাৎ ঈদুল আযহা উৎসব শুধুমাত্র প্রতিটি
মুসলমানদের জন্য আনন্দের সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি একটি ত্যাগ, তাকওয়া ও আল্লাহর
ভীতি এবং মহান আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ আত্মসমর্পণের এক মহিমান্বিত প্রতীক।
প্রত্যেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মুমিনদের উচিত কোরবানির প্রকৃত মর্ম অনুধাবন করা
এবং ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে পবিত্র এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদা সহকারে পালন
করতে হবে। আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা যদি সঠিক তথ্য জেনে
উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুদের সাথে এই
বিষয় নিয়ে বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। কেননা আমাদের এই ওয়েবসাইটে
প্রতিদিন নিত্য নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ
সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Rajrafi.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url